প্রতিনিধি ২৩ নভেম্বর ২০২৫ , ৪:১৫:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
সবুজ কুমার,বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের অন্যতম অঞ্চল বলে আবারও সতর্ক করেছেন ভূ-পদার্থবিদরা। দেশের ভূগর্ভে বাড়তে থাকা চাপ সক্রিয় ফল্টলাইন এবং টেকটনিক প্লেটের ক্রমাগত গতিবিধি বড় ধরনের কম্পনের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই সংকেতগুলো উপেক্ষা করা হলে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্যোগের মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশ।

তিনটি শক্তিশালী টেকটনিক প্লেটের মাঝে অবস্থান বাংলাদেশের
ভূবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন বাংলাদেশ এমন এক ভূঅবস্থানে অবস্থিত যেখানে ইন্ডিয়ান প্লেট ইউরেশিয়ান প্লেট এবং বার্মা মাইক্রো প্লেট পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এই দীর্ঘমেয়াদি চাপ হঠাৎ ভেঙে বেরিয়ে এলে ভূমিকম্প ঘটে। জমে থাকা চাপ যত বেশি হয় ততই বিপদের সম্ভাবনা বাড়ে।
পূর্বাঞ্চলের মেগা থ্রাস্ট ফল্ট নীরব কিন্তু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ
বাংলাদেশের পূর্বদিকে অবস্থিত মেগা থ্রাস্ট ফল্ট জোন পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক ফল্টলাইনের একটি। বিশেষজ্ঞদের মতে এই অঞ্চলে বহু বছর বড় ধরনের ভূমিকম্প না হওয়ায় বিপুল শক্তি জমে থাকতে পারে। ভূকম্পবিদ্যার ব্যাখ্যায় দীর্ঘ নীরবতা মানে জমে থাকা শক্তি যা যে কোনো সময় শক্তিশালী কম্পনে রূপ নিতে পারে।
আট বা তার বেশি মাত্রার কম্পনের সম্ভাবনা অস্বীকার করা যাচ্ছে না
আন্তর্জাতিক জিওফিজিক্স গবেষণায় বলা হয়েছে বাংলাদেশ ভারত এবং মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় আট দশমিক দুই থেকে নয় মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনার পক্ষে থাকা বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক প্রমাণও পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্লেটের স্লিপ রেট বৃদ্ধি ভূ-পৃষ্ঠের উঁচুনিচু অস্বাভাবিক পরিবর্তন ভূকম্পীয় তরঙ্গের নীরবতা এবং ছোট ছোট কম্পনের সংখ্যা বৃদ্ধি।
নরম মাটি বাংলাদেশের ঝুঁকি আরও বাড়ায়
বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা নদীনির্ভর নরম পলিমাটিতে তৈরি। বিশেষজ্ঞদের মতে নরম মাটি ভূমিকম্পের কম্পন তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পাঁচ মাত্রার কম্পন হলে বাংলাদেশে তা আরও বেশি মাত্রায় অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিশ্বের ঝুঁকিসম্পন্ন শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান শীর্ষে
অতিরিক্ত জনসংখ্যা পুরোনো ভবন সংকীর্ণ রাস্তা এবং দুর্বল উদ্ধার ব্যবস্থা ঢাকাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে ঢাকা কার্যত একটি সময়সীমাহীন ভূকম্প ঝুঁকির শহর যেখানে বড় ধরনের কম্পন ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ছোট কম্পন বৃদ্ধি বড় ভূমিকম্পের আগাম সংকেত,গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চার থেকে পাঁচ মাত্রার ছোট কম্পন বেড়েছে। সাধারণভাবে ছোট কম্পন তেমন গুরুত্ব না পেলেও ভূকম্পবিদদের মতে এটি বড় ভূমিকম্পের আগাম সংকেত। সক্রিয় ফাটল এবং জমে থাকা চাপ ভবিষ্যতে বড় কম্পনে রূপ নিতে পারে।
বাংলাদেশে আবার ভূমিকম্প হবে কি না?! বিজ্ঞানীরা সময় নির্দিষ্ট করতে না পারলেও নিশ্চিতভাবে বলেছেন বাংলাদেশে আবার ভূমিকম্প হবে। এটি সময়ের ব্যাপার তবে প্রস্তুতি থাকলে ক্ষতি কমানো সম্ভব।
সচেতনতার প্রয়োজন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানো না গেলেও সচেতনতা ভবন নির্মাণের নিয়ম মানা উদ্ধার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জনসচেতনতা দুর্যোগের ক্ষতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।











