প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৯:০২:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে (২৮) হত্যার আগে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন সংশ্লিষ্ট কারখানার ফ্লোর ম্যানেজার। পরে তাকে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে র্যাব-১৪।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১৪ এর পরিচালক নাইমুল হাসান জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেডের ফ্লোর ম্যানেজার আলমগীর হোসেন (৩৮), কোয়ালিটি ইনচার্জ মিরাজ হোসেন আকন (৪৬) অন্যতম।
র্যাব পরিচালক বলেন, ঘটনার সূত্রপাত হয় বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে। কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ দিপু চন্দ্র দাসকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন। ইস্তফা দেওয়ার পর তার নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে উত্তেজিত জনতার হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশের কাছে হস্তান্তর না করায় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় কারখানার দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারা কীভাবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলেছে—এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। এটি পূর্বশত্রুতা কিংবা পরিকল্পিত ছিল কি না, সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে একজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া কোনোভাবেই আইনসম্মত নয় এবং সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ধরনের নৃশংসতাকে কখনোই গ্রহণযোগ্য মনে করে না।
র্যাব জানায়, মামলাটি যেহেতু থানায় দায়ের হয়েছে, তাই মূল তদন্ত করবে থানা পুলিশ। পাশাপাশি র্যাবও ‘ছায়া তদন্ত’ চালিয়ে যাবে।
গ্রেপ্তার অপর আটজন হলেন—তারেক হোসেন (১৯), লিমন সরকার, মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯), নিঝুম উদ্দিন (২০), আজমল হাসান সগীর (২৬), শাহিন মিয়া (১৯) এবং মো. নাজমুল। শেষ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
র্যাব-১৪ এর পরিচালক নাইমুল হাসান আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে ভালুকা উপজেলায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তার লাশে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং অর্ধপোড়া লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে নিহত দিপুর ছোট ভাই অপু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

















