রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০৪ পূর্বাহ্ন
English
ব্রেকিং নিউজ
নাজিরপুরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীর মাঝে ইবি ছাত্রদলের গণইফতারের আয়োজন পাইকগাছায় যুব সমাজের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত কালিয়ায় বি এন পি ও আওয়ামী লীগের দু পক্ষে সংঘর্ষ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার এবং ১ জন নিহত পাইকগাছায় জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন ময়মনসিংহে শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা যুবককে পিটুনি ময়মনসিংহ ধোবাউড়ায় পুকুর থেকে ৬০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার আশুলিয়ায় শিশু ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা মিমাংসার চেষ্টা, গ্রেপ্তার ১ ঠাকুরগাঁওয়ে ভূট্টা ক্ষেত থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে রেললাইনের রেল ক্লিপসহ চোর আটক

নড়াইলে বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখির বাসা

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
  • ১৬৭ Time View
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলে বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখির বাসা। সেই চিরচেনা তালগাছে বাঁধা বাবুই পাখির বাসা এখন বিলুপ্তির পথে দেখা দিয়েছে। তালগাছ কেটে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার কারণে এলাকায় এখন আর তেমন দেখা মিলে না বাবুই পাখির বাসা। এক সময় গ্রাম-বাংলার প্রকৃতিতে দেখা মিলত সারি সারি তালগাছ ও খেজুরগাছ। সেখানে সবার নজর কাড়ত নিষ্ঠাবান বুননশিল্পী পাখির বাসা। সেই চিরচেনা তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা দুটোই এখন হাড়াতে বসেছে এ জেলায়। তেমনি হারাতে বসেছে প্রাকৃতিক শিল্পী বাবুই পাখির ভোরবেলার কিচিরমিচির মধুর সুরে ডাকাডাকি। ‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে যেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে’। বাবুই পাখিকে নিয়ে কবি রজনীকান্ত সেনের লেখা একটি কবিতার এ শব্দ চয়নগুলো বাবুই পাখির জীবনযুদ্ধের জয়গানকেই নির্দেশ করে। গ্রামে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ গ্রামীণ প্রকৃতি ও চড়ুই পাখির ডাকাডাকিতে প্রশান্তি পায়। সহজে ভুলতে পারে না এমন দৃশ্য। গ্রাম ও গ্রামীণ জীবনে চিরচেনা রূপের মধ্যে বাবুই পাখির বাসাও অন্যতম। ছেটদের কবিতার বইয়ে স্থান পাওয়া ছোট কবিতাটির প্রতিফলন যেন বাবুই পাখির বাসা। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান,
ছড়াটি প্রাথমিকের বইয়ের পাঠ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাঠ্যপুস্তকের কবিতা পড়েই শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির নিপুণ কারুশিল্পের কথা জানতে পারত।নির্বিচারে গাছ উজার আর একশ্রেণির শিকারির কারণে বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির এ বুনন শিল্পীরা। বর্তমানে কেশবপুরের কিছু এলাকায় বাবুই পাখির বাসা দেখা যায়। এক সময় গ্রামাঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যেত। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি বাস্য বাঁধে। এ বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি মজবুত। । খড়, কুটা, তালপাতা, খেজুর পাতা, ঝাউ ও লতা- পাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তালগাছে তাদের বাসা বাঁধে। জানা গেছে, পুরুষ বাবুই পাখি এক মৌসুমে ৬টি বাসা তৈরি করতে পারে। আমন ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। এ সময় সাধারণত তাল ও খেজুর গাছের ডালে বাসা তৈরি করতে ব্যস্ত থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই খেত থেকে খান সংগ্রহ করে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের আগ্রাসী কার্যকলাপের বিরূপ প্রভাবই আজ বাবুই পাখি ও তার বাসা হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে দেশের গ্রামগঞ্জের কিছু কিছু অঞ্চলের তাল ও খেজুর গাছে এখনও চোখে পড়ে বাবুই পাখির বাসা। তবে তালগাছেই তাদের একমাত্র নিরাপদ জায়গা। সেখানে তারা বাসা বাঁধতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় লাগে, ঠিক তেমনি অনেক মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ছিঁড়ে নিচে পড়ে না। পুরুষ বাবুই পাখি বাসা তৈরির কাজ শেষ হলে সঙ্গী খুঁজতে বের হয়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য পুরুষ বাবুই নিজেকে আকর্ষণীয় করতে খাল, বিল ও ডোবার পানিতে গোসল করে গাছের ডালে ডালে নেচে বেড়ায়। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করতে বাসার ভিতর এক চিমটি গোবর রেখে জোনাকি পোকা ধরে এনে তার ওপর বসিয়ে দেয় এবং সকাল হলে ছেড়ে দেয়। প্রজনন সময় ছাড়া বাবুই পাখির গায়ে ও পিঠে তামাটে কালো বর্ণের দাগ হয়। ঠোঁট পুরো মোসাকার ও লেজ চৌকা। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাড় বাদামি। অন্য সময় বাবুই পাখির পিঠের পালকের মতোই বাদামি হয়। হাটবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ কুন্ডু বলেন, আমার বাড়ির পাশে তালগাছ ছিল সেখানে শত শত বাবুই পাখি তাদের বাসা বাঁধক। দিনশেষে সন্ধ্যাবেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে বাবুই পাখি তাদের নীড়ে ফিরত আর । কিচিরমিচির ডাকে পুরো এলাকা মাতিয়ে তুলত। ভোরবেলাতেও তাদের কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙত। কিন্তু এখন তালগাছ ও খেজুরগাছ কমে যাওয়ায় সবই বিলুপ্তির পথে। কালা দাস বলেন, নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বাবুই পাখির বাসা চিনে কিনা কিংবা দেখলেও চিনবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বাবুই পাখিরা এই সাধারণত তালগাছ ও খেজুর গাছেই বাসা তৈরি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। চড়ুই পাখি মানুষের ও বাসাবাড়িতে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু বাবুই যা পাখি পরিশ্রমী হয় এবং নিজের তৈরি বাসাতে থাকে। এদের বাসাগুলোও দেখতে চমৎকার না এবং মজবুত হয়। বাবুই পাখিই এরকম সুন্দরভাবে বাসা তৈরি করতে পারদর্শী। এজন্যই বাবুই পাখিকে প্রকৃতির নিপুণ কারিগর বল্য হয়। তিনি বলেন, কিছু মানুষ বুঝে না বুঝে তাদের । শিকার করছে। এ ছাড়া দিন দিন তালগাছ ও খেজুরগাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যে কারণে বাবুই পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। বৃক্ষ নিধন ও নির্বিচারে পাখি শিকারের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন খুব একটা দেখা যায় না। পরিবেশ পও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে পাখি নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি পাখিরণ্য সৃষ্টি করতে হবে।

Author

Please Share This News in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© Muktakathan Kalyan Foundation ©
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102