সাভার প্রতিনিধি : ঢাকার ধামরাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শরিফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের শহিদ ও আহতদের স্মরণে এক বিশদ আলোচনা ও স্বরণ সভার আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানটি মাদ্রাসার শিক্ষক – শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
আলোচনা সভাটি মাদ্রাসার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মোঃ ফায়জুল আমীন সরকার মাদানী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিনিয়র আরবি প্রভাষক জনাব আব্দুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষকমণ্ডলী, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সভায় বক্তারা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি, তার ফলাফল এবং শহিদদের আত্মত্যাগের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন।
সিনিয়র ইংরেজি শিক্ষক মো: রহিম বিল্লাহ , তিনি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংগঠিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা করেন। তিনি বলেন,
এই আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছিল দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল। তাদের আত্মত্যাগই আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আন্দোলনের সময় বিভিন্ন জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থার মধ্যেও শিক্ষার্থীদের সংগ্রাম অব্যাহত ছিল।
সিনিয়র শিক্ষক কামরুল হাসান তিনি বলেন, একটি জাতির স্বাধীনতার জন্য যেমন সংগ্রাম প্রয়োজন, তেমনই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যও ত্যাগ অপরিহার্য। ১৯৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আর ২০২৪ সালের এই অভ্যুত্থান ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই।
ধামরাইয়ের শহিদ সাদকে বিশেষভাবে স্মরণ করে তিনি বলেন,
শহিদ সাদ এই অভ্যুত্থানে ধামরাই এর সৈনিক ছিলেন। তার ত্যাগ আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।
হাদিস বিশারদ মোঃ আব্দুর রউফ, তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মুসলিমদের অবদানের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন,১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনেই মুসলিমরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। মুসলিমদের আত্মত্যাগ ছাড়া এই স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার কখনো অর্জিত হতো না।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ড. মোঃ ফায়জুল আমীন বলেন, ২০২৪ সালের এই আন্দোলন কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য ছিল না। এটি ছিল তরুণ প্রজন্মের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। শহিদদের এই আত্মত্যাগ জাতির জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন,
শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা, দেশপ্রেম ও ঐক্যের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তোমাদের হাতেই থাকবে।
সভাটি দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। ড. ফায়জুল আমীন সরকার মাদানী শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন,
আসুন আমরা সবাই মিলে শহিদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করি। তাদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়।
স্মরণসভায় বক্তাদের আলোচনা ও ছাত্র-শিক্ষকদের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে, এই আয়োজন কেবল অতীতের স্মৃতি চারণই নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। ধামরাইয়ের শরিফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার এই উদ্যোগ নতুন প্রজন্মকে দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।