“পাপ ঢাকতে বাপ্”
রম্যরচনা
অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর,মুর্শিদাবাদ।
লাইনে গরীব মানুষ সর্বত্র। সে রেলের টিকিট, বাসের টিকিট,রেশনে ডোলের ভিক্ষা হোক। ধনীদের অনলাইনে সবকিছুই রিজার্ভেশন। বিমান হেলিকপ্টারে যাত্রা সব নেতা মন্ত্রী ধনী ব্যক্তিদের,আর গরীবেরা উড়োজাহাজ দেখার জন্য আকাশের দিকে মুখ উঁচু ক’রে দেখতে গিয়ে মাটিতে চিৎপটাং হ’য়ে পড়ে অথবা বিমান বন্দরে উঁকি ঝুঁকি মারে।
দৈবদূর্বিপাক নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে জনকল্যাণ সমিতির ময়দানে। বক্তারা একে একে এক্সিডেন্ট বলতে সমস্ত সমস্যা আড়াল করে। ভোম্বল দাস চিৎকার করে মঞ্চে উপস্থিত হলো, সবাই হতচকিত হয়ে গেছে। ভোম্বল কি বলবে আবার?
ভোম্বল বললো – আমি কিছু বলতে চাই সভায় আপনাদের মাঝে। অনুমতি দেওয়া হোক। জনতা হাততালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। ভোম্বল মাইক নিয়ে শুরু করলো – দৈব দূর্বিপাক অনেক সময় ঘটানো হয়, দোহাই দেওয়া হয় ঈশ্বরের। সংবিধানের অধিকার কাজের, খাদ্যের, চিকিৎসা, বাসস্থানের। ধনীদের জন্য নার্সিং হোম,আর গরীবের জন্য সরকারী হাসপাতাল। সেখানে লাইন, ঠেলাঠেলি করে ভীড়ে মানুষের মৃত্যু, অথবা ভেজাল ঔষধ দিয়ে মৃত্যু ঘটানো হয়। গরীবের জন্য রেলগাড়ি নাম গরীব রথ, মানুষের সেখানেও ঠেলাঠেলি। ধনীদের রিজার্ভেশন ব্যবস্থা। একই রেলগাড়ীতে কেউ আরাম ক’রে শুয়ে যাচ্ছে আর সবাই চাপাচাপি ক’রে বাদুড় ঝোলা ঝুলে প্রাণের ঝুঁকি। নষ্ট পোকা লাগা খাদ্য সামগ্রী রেশনে বরাদ্দ, এটা গরীবদের জন্য,লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রেশনে ভীড়, ধনীর উচ্ছিষ্ট খাবারে গরীব মানুষের আর কুকুরের ভাগাভাগি।
দূর্গম জায়গায় দেবতাদের স্থান। পাহাড় ডিঙিয়ে যেতে যেতে পথমাঝে মানুষের মৃত্যু। নেতা মন্ত্রী তারা প্লেনে গিয়ে পূজা দিয়ে আসেন। নিজেদের পাপ ঢাকতে বাপ্ বাপ্ করে ঠাকুরের শরণাপন্ন হচ্ছেন। আরে বাবা! সব পাপ দূর হবে শুধু তোমাদের বউদের সামনে সব খুলে বলো তাহলেই মুক্তি। মামলায় উকিলকে সব খুলে না বললে পরাজয় অবধারিত কিন্তু বৌয়ের সামনে বলতে গেলে গৃহযুদ্ধ। বৌয়েরা কিছু করলে পাপ আর তোমাদের পাপ ঢাকতে ছুটতে হচ্ছে মন্দিরে গঙ্গাস্নানে। কয়লা ধুলেও ময়লা যেমন যায়না, তেমনি তোমাদের পাপ ঢাকতে বাপ্ ছুটে এলেও মুক্তি নাই। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায়। তেমনি ঘরনীকে আয়না বানিয়ে মনের কথা সব বললে মুক্তি পাওয়া যায়। নামেই অর্ধাঙ্গিনী, শরীরের ভাগে। আবার পতির পূণ্যে সতীর পূণ্য। পতির পাপের বোঝাও সতীর ঘাড়ে। ঘরে রেখে বন্দি ক’রে পরকীয়া, নিজের পদ্মপুকুর ছেড়ে পানা পুকুরে চান? এপাপ অনাচার কুম্ভস্নানে কি ধোওয়া যায়? রাজা মন্ত্রী তারা করে রাজনীতি, মানুষ ছোটে তীর্থস্থানে ,পদপিষ্টে মৃত্যু। রাজা মন্ত্রী তারা হেলিকপ্টারে নেমে ফাঁকা জায়গায় পুলিশ পরিবেষ্টিত হয়ে পূণ্যস্নান সেরে, তারা দেখে শতশত মানুষের মৃত্যু অব্যবস্থাপনার ফলে। দোহাই দেওয়া হয়, দেবস্থানে তীর্থস্থানে মরণে স্বর্গ লাভ হয়! যদি তাই হয় তাহলে তোমাদের মরণ ওখানে কেন হয়না? তোমাদের জনতার দরবারে পিটিয়ে মারলে হয়তো দেশের পাপ ঘুচে যাবে?
নদীর সংস্কার হয়না, গঙ্গার দূষণ, যমুনা তো ময়লা নোংরা ,শহরের নিকাশি জল মিলে মিশে একাকার। পবিত্র স্থান তখনই হবে, যখন জলটা পবিত্র থাকবে। মক্কা মদিনা সেখানেও জনতার আধিক্যে পদপৃষ্ট। মানুষের ভীড় এড়াতে দেশ বিদেশের পূণ্যার্থীদের রেশনিং করলে ভীড় সামলানো যাবে। অসহায় মানুষের সেখানেও মৃত্যু ঘটে।
আরো বললো ভোম্বল, আমার নেই সম্বল,তাই বিয়ে করিনি। যাকে আনবো তাকে খেতে দিতে পারবোনা কিন্তু তাকে কারখানা বানিয়ে সন্তান উৎপাদন হবে, তার দায়ভার কে নেবে? আমি এপাপের ভাগী হ’তে চাই না! ক্ষমতার অপব্যবহার করা উচিত নয়। ধর্মগ্রন্থে হাত ছুঁয়ে শপথ নিয়ে বলতে হয় “যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য ছাড়া মিথ্যা বলিব না” তারপরে রাজা মন্ত্রী বিচারক সেই বাক্য অমান্য করে। স্বজন পোষন, কোটি কোটি চাকুরী দেবো বলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, শিক্ষিত ছেলেদের সঙ্গে প্রতারণা করে অযোগ্যদের কাছে চাকুরী বিক্রি, আবাসনের টাকায় কাটমানি, ঘুষের টাকায় একদিনে রাজা হওয়ার স্বপ্ন। টালির চাল দ্রুত আজ রাজপ্রাসাদ,তার চারিধারের এলাকা দখল মুক্ত করে অধিকারে বাগানবাড়ি। এতো অনাচারের মরণ কেন হয়না? পাপ বেঁচে থাকে আর নিষ্পাপের হয় মৃত্যু।
—————————