শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:১৪ অপরাহ্ন
English
ব্রেকিং নিউজ
সাভারে ল্যাব হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ, আটক ১ চট্টগ্রামে স্বস্তির ঈদযাত্রা, যাত্রীর চাপ বাড়লেও নেই ভোগান্তি ইকর’অ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ঈদ উপহার পেলেন ৫০টি পরিবার তারেক রহমানের নেতৃত্বে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবো: টিপু আবুল কাশেম নূর জাহান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ২০২০ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সাফল্যের সাথে সম্পন্ন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় মরহুম আদিল উদ্দিন মিয়া স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহের ভালুকায় গেইটে তালা, অবরুদ্ধ তিনটি বাড়ির ভাড়াটিয়া সাভারে ট্রাক চাপায় পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু, ঘাতক চালক আটক দেবহাটায় সুন্দরবন ট্রান্সপোর্টের আয়োজনে ইফতার মাহফিল নতুন করে যারা ফ্যাসিবাদী করার চেষ্টা করবে তাদেরকে কিক মেরে ইন্ডিয়া পাঠানো হবে, ড. আতিক

২৬ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম সোপান, বাঙালির বীরত্বের এক অমলিন চিহ্ন

Muktakathan News
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫
  • ১৬ Time View

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান,ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মিশরঃ ২৬ মার্চ, ১৯৭১—বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন, যার প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি শব্দ আজও আমাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। এটি ছিল সেই দিন, যখন বাঙালি জাতি তার স্বাধীনতার প্রথম শপথ গ্রহণ করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর আক্রমণ, এবং এক নতুন মুক্তির সূচনা—এই দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়, বরং বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়, সংগ্রাম এবং গৌরবের প্রথম চিহ্ন।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, স্বাধীনতার মন্ত্র
২৬ মার্চ, ১৯৭১—এটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের দিন, যা বাঙালি জাতিকে মুক্তির পথে এক নতুন চ্যালেঞ্জের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় নিরস্ত্র মানুষদের ওপর আক্রমণ শুরু করলে, ২৬ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তার ভাষণ ছিল, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম!”

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ ছিল কেবল একটি রাজনৈতিক ঘোষণা নয়, এটি ছিল বাঙালি জাতির জন্য একটি আত্মবিশ্বাসের প্রেরণা, একটি আত্মমর্যাদার রূপ। এর পরই বাঙালি জাতি জানিয়ে দেয়, তারা আর পাকিস্তানি শাসনের অধীন থাকবে না, তারা তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে আগ্রহী।

পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা, রক্তের নদী
২৬ মার্চের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালির উপর দমন-পীড়ন আরো তীব্র করে। তাদের বর্বর আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামে প্রতিবাদী মানুষের রক্তে রাঙিয়ে ওঠে। নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া—এতে প্রতিটি শহর ও গ্রাম আতঙ্কে ভরে যায়। পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন যা করেছিল, তা ছিল ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায়। কিন্তু সেই রক্তাক্ত দিনগুলোই বাঙালি জাতির শক্তি ও সাহসকে আরও দৃঢ় করেছিল।

একদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতা, অন্যদিকে বাঙালি জাতির একত্রিত সংগ্রাম—এই দ্বন্দ্ব থেকেই জন্ম নেয় বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের এক মহাকাব্যিক ইতিহাস। এটি ছিল শুধু এক যুদ্ধে জয়ের গল্প নয়, এটি ছিল জাতির শৃঙ্খলমুক্তির গল্প, যেখানে আত্মত্যাগ, ত্যাগ ও সংগ্রামের নিদর্শন ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের শপথ, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের অটুট দৃষ্টান্ত
২৬ মার্চের পর বাঙালি জাতি শুধু যুদ্ধের পিপঁড়ের মতো মাঠে নামেনি, তারা এক সংগ্রামী শক্তি হিসেবে একযোগভাবে দাঁড়িয়ে যায়। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত জনগণ, ছাত্র-শ্রমিক-নারী—সবাই তখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তারা জানতো, এটি শুধু একটি যুদ্ধে জয় নয়, এটি তাদের অধিকার, তাদের স্বাধীনতা, এবং তাদের মাতৃভূমির জন্য আত্মত্যাগ।

যুদ্ধের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল বাঙালি জাতির বীরত্বের এক অসীম চিহ্ন। কিছু ছিল অল্প বয়সী, কিছু ছিল বৃদ্ধ, কিছু ছিল মা-বোন—সবাই ছিলেন এক বিন্দুতে ঐক্যবদ্ধ। তারা জানতো, কোনো সংগ্রামে যাত্রা শুরু হলে তাতে বিপদ-বিঘ্ন আসবেই, কিন্তু স্বাধীনতা তাদের জন্য জীবনের চেয়েও বড় ছিল। সেই মুক্তির সংগ্রামে তারা দিনরাত একাকার হয়ে গিয়েছিল।

স্বাধীনতার প্রাপ্তি, এক জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন
এ দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১—অবশেষে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হয়ে বাংলাদেশে আত্মসমর্পণ করে। ২৬ মার্চের সেই আহ্বান, সেই যুদ্ধের অঙ্গীকার এবং দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া সকল শহীদের রক্তের বিনিময়ে মুক্তি আসে।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টালে ২৬ মার্চের নাম সোনালী অক্ষরে লেখা থাকবে, যা প্রমাণ করবে যে একটি জাতি যদি একত্রিত হয়ে সংকল্পবদ্ধ হয়, তাহলে তার বিজয় নিশ্চিত।

আজও ২৬ মার্চ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা কেবল একটি রাজনৈতিক অর্জন নয়, এটি একটি জাতির আত্মগৌরব, তার আত্মবিশ্বাস, তার সংগ্রাম এবং তার ইতিহাস। এই দিনটির তাৎপর্য প্রতিটি বাঙালির মনে চিরকাল অমলিন থাকবে, কারণ ২৬ মার্চ ছিল এক নতুন সূর্যোদয়ের প্রতীক।

লেখক, শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর

Author

Please Share This News in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© Muktakathan Kalyan Foundation ©
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102