জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ানঃ সে আসে হাওয়ার মতো—না বলে, না জানিয়ে। আসে নিঃশব্দে, ঠিক যেমন সন্ধ্যার আলো ঢুকে পড়ে ঘরের কোণে, বোঝা যায় না কখন আসছে, আবার বুঝে ওঠার আগেই সব আচ্ছন্ন করে ফেলে।
তার চোখে এক ধূসর আকাশ—যেখানে স্পষ্ট করে কিছু দেখা যায় না, কিন্তু তাকালেই মন ডুবে যায়। ঠোঁটে তার এমন এক হাসি, যেন কোনো উত্তরাধিকারী ব্যথা লুকিয়ে রাখে। সে যখন বলে, মনে হয় সত্য বলছে। সে যখন চুপ করে থাকে, তখনও তার নীরবতা কথা বলে।
ছলনাময়ী নারী কেবল একটি চরিত্র নয়—সে এক বিপরীতমুখী অনুভব, সে প্রেমের গভীরতা আর বেদনার সূক্ষ্ম ছায়া। তার মধ্যে এক অদ্ভুত আকর্ষণ, যা চোখে দেখা যায় না, তবু হৃদয়ে ঢেউ তোলে।
তাকে নিয়ে কেউ কবিতা লেখে, কেউ গভীর রাতে নামহীন বার্তা টাইপ করে আবার মুছে ফেলে। আর কেউ—স্রেফ এক কাপ চায়ের কাপে ডুবিয়ে রাখে তার স্মৃতি।
সে ভালোবাসে, আবার ভালোবাসা ভুলেও যায়। সে চায়, কিন্তু আঁকড়ে ধরে না। সে ভাঙে, কিন্তু নিজের হাত নোংরা করে না। ছায়ার মতো পাশে থাকে, আবার ঠিক তখনই মিলিয়ে যায়, যখন তার উপস্থিতি সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল।
তাকে কেউ বলে কাঁচের মতো ঠুনকো, কেউ বলে আগুনের মতো পোড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে হয়তো নিজেও জানে না—সে কে।
হয়তো এক সময় খুব ভালোবাসত কাউকে, কিন্তু প্রতারিত হয়ে নিজেই হয়ে উঠেছে এক প্রতিচ্ছবি—নতুন ছলনার।
এই নারীর ছলনা একধরনের আত্মরক্ষা, এক ধরনের প্রতিরোধ। যেন সে আগে কাউকে ঠকানোর আগেই নিজেকে গুটিয়ে নেয়।
তবুও—তাকে ভালোবেসে পড়ে বহু হৃদয়, বারবার। কারণ তার প্রতিটি ছলনার পেছনে লুকিয়ে থাকে এক অনুচ্চারিত অভিমান, এক না-বলা গল্প।
তাকে ভালোবেসে কেউ গড়তে শেখে, আবার কেউ ভেঙে গিয়ে গড়া মানুষ হয়।
তাকে হারিয়ে কেউ রাতের আকাশে তারাগুলোকে দোষ দেয়, আবার কেউ কেবল চোখ বন্ধ করে বলে—
“তবুও সে ছিল আমার একরাশ প্রিয় ছায়া…”
ছলনাময়ী নারী—সে কোনোদিন সম্পূর্ণ পাওয়া যায় না। সে শুধু অনুভবে থাকে, কবিতায় বাঁচে, দীর্ঘশ্বাসে ধরা দেয়।
আর যখন সে চলে যায়, তখন রেখে যায় এমন কিছু ব্যথা, যা অদ্ভুতভাবে মধুর।
কারণ সে আসলে ধোঁয়া নয়, দীপ্তি নয়—
সে এক চিরন্তন ধাঁধা, যার নাম ভালোবাসা।
লেখক, শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর