হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জ জেলায় নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কমিটি নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিতে এনসিপির আত্মপ্রকাশকে ঘিরে যখন আগ্রহ ও আলোচনা তুঙ্গে, তখনই নবঘোষিত কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, নবগঠিত জেলা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন একাধিক মাদক কারবারি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির বর্তমান বা সাবেক নেতাকর্মীরা। এতে প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ কি এই দলটি জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে, নাকি পুরনো দলবাজি ও সুবিধাভোগীদের আরেকটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে?
বিশেষ করে, গণঅধিকার পরিষদ থেকে বহিঃষ্কৃত নেতা মাহবুবুল বারী চৌধুরী মুবিনকে করা হয়েছে যুগ্ম সমন্বয়কারী। এছাড়াও চুনারুঘাট সদর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান চৌধুরী নোমানকে সদস্য করা হয়। একই উপজেলার ৩ নম্বর দেওরগাছ ইউপি যুবলীগ নেতা এবং ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজুলল করিমকেও সদস্য করা হয়েছে। আরেক সদস্য জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন, তিনি হবিগঞ্জের একটি মদের পাট্টার মালিক এবং ‘পাট্টা নাসির’ নামে পরিচিত, সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন এক জামায়াত নেতা। আ খ ম উস্তার মিয়া বাহুবল উপজেলা জাপার সেক্রেটারী এবং সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহিরের ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত। কমিটিতে সদস্য করা হয় আওয়ামী লীগের সময়ে সুবিধাভোগী জাসদের জেলা সেক্রেটারি আবু হেনা মোস্তফা কামালকে। কমিটির আরেক সদস্য মীর দুলাল, তিনি কিছু দিন আগে ৩৪ বোতল ফেনসিডিলসহ পুলিশের খাঁচায় আটক ছিলেন।
আওয়ামী নেতায় ভরপুর এমন কমিটি কীভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়া উত্তরা অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরে অনুমোদিত হয়- এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এই কমিটি করার পেছনে অর্থনৈতিক লেনদেন আছে কি না সেই প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।
হবিগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক পলাশ মাহমুদ বলেন, হবিগঞ্জে এনসিপির যে কমিটি দেওয়া হয়েছে এটি জুলাই চেতনার পরিপন্থি। তিনি মনে করেন এই কমিটিরি পেছনে আর্থিক লেনদেন হয়েছে।
কমিটির সদস্য হারুন আল রশিদের অভিযোগ, তাকে না জানিয়েছে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এনসিপিতে তার নাম দেওয়া তিনি প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, যদি এই ধরনের সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকে, তবে এনসিপি অচিরেই একটি অবিশ্বাসযোগ্য ও অকার্যকর সংগঠনে পরিণত হবে। একটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দলটির সামনে সুযোগ ছিল নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলার, কিন্তু বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি গঠন সেই আশাকে ধূলিসাৎ করেছে।
জেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলীয় আদর্শ, নীতি কিংবা মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষার চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও আর্থিক লেনদেন বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। স্থানীয়ভাবে পরিচিত কয়েকজন সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীকে উপেক্ষা করে বিতর্কিতদের স্থান দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
হবিগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরী সামির সাকির বলেন, প্রকৃতদের বাদ দিয়ে ফ্যাসিস্ট দোসরদের পুর্নবাসন করা হয়েছে হবিগঞ্জ এনসিপির কমিটিতে।
বীরমুক্তিযোদ্দা কাজী গোলাম মর্তুজার আশা, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। অন্যথায় নতুন রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেও এনসিপি জনগণের আস্থা হারাবে বলেই ধারণা করছেন তিনি।
এব্যাপারে কথা বলতে রোববার দুপুর ১টা ১৪ মিনিটে সারজিস আলমের সেলফোনে একাধিকার কল দিলেও সিসিভ করেননি তিনি।
নবগঠিত জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ উদ্দীন তারেক বলেন, কমিটিতে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলা হচ্ছে তারা কোন একসময় হয়তো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে ছিলেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে কোনো দলে না থাকায় জুলাই চেতনা ধারণ করে এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। এখানে কাউকে জোড় করে কমিটিতে আনা হয়নি।