রফিকুল ইসলাম রফিক, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বাকরেরহাট বাজারে, বিকাশ প্রতারণার মাধ্যমে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে মোটরসাইকেলে পালানোর চেষ্টাকালে, এক প্রতারককে জনতা আটক করেছে।
আটককৃত ব্যক্তির নাম এরশাদুল ইসলাম (৪০)। তিনি উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের হারুনেফড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (২৫ জুন) সকাল ১০ টার দিকে বাকরেরহাট বাজারে, মো. ইলিয়াস হোসেনের বিকাশ দোকানে লেনদেনের সময়, প্রতারক এরশাদুল ইসলাম কৌশলে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর তিনি দ্রুত মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এসময় বিকাশ ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস হোসেন বিষয়টি আঁচ করতে পেরে দৌড়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এসে চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সেটির পেছন থেকে ধরে ফেলেন। প্রায় ৪০০ মিটার পর্যন্ত তাকে টেনে নিয়ে যায় মোটরসাইকেলটি। একপর্যায়ে প্রতারক এরশাদুল মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, গাড়ি ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখনই ইলিয়াস হোসেন চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে প্রতারককে আটক করে।
বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বাকরেরহাট বাজারে একাধিক বিকাশ প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে এই প্রথম কোনো প্রতারককে হাতেনাতে আটক করা হলো।
প্রতারককে আটকের পর তার ছবি ও তথ্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উলিপুর ও আশপাশের এলাকা থেকে অনেকে অভিযোগ করেন, এরশাদুল পূর্বেও এ ধরনের প্রতারণা করেছেন। উলিপুরের একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ব্যবসায়ী আবু সিদ্দিক বলেন, “আমার কাছ থেকেও এরশাদুল প্রতারণার মাধ্যমে তিন লাখ টাকা নিয়েছিল। স্থানীয় সালিশে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা ফেরত দিলেও বাকি এক লাখ ৪০ হাজার টাকার জন্য স্ট্যাম্প দিয়ে, দিন নির্ধারণ করলেও পরে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।”
এছাড়া মিনা বাজার, নাজিমখান, কদমতলা, ঠুটাপাইকর, বকুলতলা, রাজারহাট, এমনকি লালমনিরহাট এলাকা থেকেও একই ধরনের প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, এরশাদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে বিকাশ ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। তিনি মাদক ও জুয়া, বিশেষ করে ক্যাসিনো খেলায় আসক্ত বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে মামলা ও গণধোলাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাকে বাকরেরহাট বাজারের এক দোকানে আটকে রাখা হয়। দুপুরে উলিপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ না থাকায় পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পরে পুলিশ তাকে বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. শাহীন আলমের হেফাজতে দিয়ে চলে যায়।
অবশেষে রাত ১২টার দিকে এরশাদুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা এসে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে তাকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যান।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি প্রতারণা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয়দের তৎপরতায় প্রতারক আটক হওয়ায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।