জনপ্রিয় - নিউজ

যুবদের অংশগ্রহণে সুনামগঞ্জে এসআরএইচআর ও জলবায়ু সহনশীলতা সংলাপ

  প্রতিনিধি ১১ আগস্ট ২০২৫ , ২:৩৯:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলে প্রতি বছর প্রায় ৭০% এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়, যার ফলে পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরণের বিঘ্ন ঘটে। BDHS (২০২২) অনুযায়ী, এই জেলায় ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৬০% এর বেশি ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিবাহিত হয়েছেন। অপরদিকে, দূষিত পানি ও অপর্যাপ্ত স্যানিটেশনের কারণে কিশোরীদের মধ্যে ৩৫% এরও বেশি অনিয়মিত মাসিক ও ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যায় ভোগেন (Global Health Now, 2024)। বর্ষাকালে বহু পরিবার স্বাস্থ্যসেবা নিতে একমাত্র বিকল্প হিসেবে নৌকা ব্যবহার করে থাকেন, যা জরুরী সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিত করার পথকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।

এই বাস্তবতা সামনে রেখেই তরুণদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার (SRHR) ও জলবায়ু সহনশীলতা ইস্যুতে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের সুযোগ করে দিতে ৭ আগস্ট জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়, সুনামগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো একটি দিনব্যাপী নীতিগত সংলাপ কর্মশালা। ইউএনএফপিএ-বাংলাদেশ এর সহায়তায়, সুইডিশ উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা সিডা’র অর্থায়নে এবং সিরাক-বাংলাদেশ এর বাস্তবায়নে ‘ইয়ুথ ক্যাটালিস্ট’ প্রকল্পের আওতায় এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পটি বিশেষভাবে প্রান্তিক ও জলবায়ু-সংবেদনশীল তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ও জলবায়ু সহনশীলতা সংশ্লিষ্ট জাতীয় নীতিমালায় পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করবে। জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ের তরুণদের সাথে পরামর্শমূলক সভা, কর্মশালা, ক্যাম্পেইন এবং অন্যান্য কার্যক্রম সমূহের মাধ্যমে যুবদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক একটি জাতীয় শ্বেতপত্র তৈরি করে সংশ্লিষ্ট জাতীয় নীতিমালায় পরিবর্তন আনাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

এই কর্মশালায় সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও ভৈৗগলিক অবস্থান থেকে ৩০ জন তরুণ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন, যারা তাঁদের নিজ নিজ বাস্তব অভিজ্ঞতা, অঞ্চলভিত্তিক সংকট এবং নীতিগত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। তাদের আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল: মাসিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা, দুর্যোগকালে স্বাস্থ্যসেবায় বিঘ্নতা, জলবায়ুজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি, প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক তরুণদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার (SRHR), সেবা প্রাপ্তি।

উদ্বোধনী বক্তব্যে সিরাক-বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত বলেন: “সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ফলে যে সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সাথে স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। কিশোর-কিশোরীরা অনেকেই এখনো কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে জানে না, এমনকি সেখানকার সেবাসমূহ সম্পর্কেও অবগত নয়। আমরা যে কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীন পরিবর্তনের কথা বলি, সেই পরিবর্তন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে তরুণদের অভিগম্যতার মাধ্যমেই শুরু হওয়া উচিত। কারণ, আমরা এমন একটি সময় পার করছি যেখানে দেশের যুব জনসংখ্যা সর্বাধিক-এবং এই তরুণদের স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নিয়াজুর রহমান এর সভাপতিত্বে এবং সিরাক-বাংলাদেশ এর উপপরিচালক (প্রোগ্রাম) মোঃ সেলিম মিয়া-র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মোঃ মোহাইমিনুল হক সহকারী পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, এবং জুনায়েদ আহমেদ জনি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জনাব মোঃ মোহাইমিনুল হক বলেন সুনামগঞ্জ বাংলাদেশের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে এখানকার কিশোর-কিশোরীদের ওপর। নিয়মিত বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে অনেকেই স্কুল থেকে ঝরে পড়ে এবং বাল্যবিবাহের হারও এখানে তুলনামূলকভাবে বেশি।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এর উপপরিচালক মো. নিয়াজুর রহমান বলেন: তরুণদের মৌলিক অধিকারগুলো তারা সঠিকভাবে পাচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। আমরা নীতিমালা তো তৈরি করি, কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা রকম চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। তাই বাস্তব প্রেক্ষাপট বুঝে কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি। হাওর অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ-এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতকে বিবেচনায় রেখে কার্যক্রম ডিজাইন করা উচিত। সুনামগঞ্জে বছরের দুটি ভিন্ন প্রাকৃতিক অবস্থা থাকে-একটি সময় যখন চারদিক পানিতে নিমজ্জিত থাকে এবং অন্যটি শুষ্ক মৌসুম। এই দুই সময়ের চাহিদা ও সমস্যাও ভিন্ন। সেক্ষেত্রে কার্যক্রম গ্রহণের সময় উভয় মৌসুমের বাস্তবতা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।

এছাড়া কর্মশালার বিভিন্ন দলভিত্তিক সেশন পরিচালনা করেন সিরাক-বাংলাদেশ এর ইনোভেশন ও ইয়ুথ স্পেশালিস্ট নাজমুল হাসান, দলগত উপস্থাপনা এবং প্রস্তাবনা পর্ব পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেসি স্পেশালিস্ট মিজানুর রহমান আকন্দ, ও এমইএল অফিসার রুহিয়াত তাসনিম। দলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে তরুণরা কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নপত্রে মতামত প্রদান করেন এবং তাদের উপস্থাপনাগুলোর ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সুপারিশ দেন।

Author

  • প্রকাশক ও সম্পাদক

    আমার নামে কোনো অভিযোগ থাকলে এই ঠিকানায় (muktakathan247@gmail.com) অথবা 01307006206, 09638262545 এই নম্বরে যোগাযোগ করে আপনারা প্রমাণ সহ পাঠাতে পারেন। আমার পত্রিকা অফিস আমার অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে আইন গত ব্যবস্তা নিতে পারবেন আমার অপরাধের বিষয়ে।

    View all posts

আরও খবর

Sponsered content